Tuesday, June 24, 2008

সুন্দরবনে বাঘ হত্যা

গত ২২ জুন তারিখে একটি খবর প্রায় সব পত্রিকাতে প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনে আবারো একটি বাঘ হত্যা করা হয়েছে।
প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ঘরের চালে বিশ্রামরত বাঘের ছবি
একটি বয়স্ক পুরুষ বাঘ লোকালয়ে এসে পরপর তিনজন মানুষকে হত্যা করে। পরে একটি ঘরের চালায় বাঘটি আশ্রয় নিলে গ্রামবাসী তাকে সারারাত ঘিরে রাখে।
প্রথম আলো পত্রিকার খবরে প্রকাশ "সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী, ৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর আলমগীর দেওয়ান, সুন্দরবনের কদমতলা স্টেশনের বন কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক রাত থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন।" সকালে গ্রামবাসী বাঘটির গলায় দড়ির ফাঁস পড়ায় এবং পিটিয়ে হত্যা করে। তখন সরকারি কর্মকর্তারা দূরে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনা অবলোকন করেছেন। পরদিন ২৩ জুন তারিখে পত্রিকায় এই ঘটনার নানামুখী বিশ্লেষণ দেখা যায়। কেউ সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা আলোচনা করেছেন, কেউ সরকারি বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে লোকবল এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতির অভাব থাকার কারণে এই বাঘটিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। চিড়িয়াখানায় যেমন থাকে তেমন চেতনানাশক ঔষধ যদি বনবিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে থাকত তাহলে হয়ত বাঘটির প্রাণ বাচানো যেত। পুলিশ সুপার বলেছেন তারা ফাকা গুলি করেছেন তবুও বাঘটি জঙ্গলে চলে যায় নি। গ্রামবাসীদেরকে তিনি বাধা দিয়েছেন, কিন্তু তারা তা মানে নি।

সমকাল পত্রিকায় অবশ্য ঘটনার বিবরণ অন্যরকম। মূল ঘটনা ঠিক আছে। বাঘটি পরপর তিনজন মানুষকে আকস্মিক আক্রমণে হত্যা করে। কিন্তু তাকে সারারাত গ্রামবাসী কোন জায়গায় ঘিরে রাখেনি। সকালবেলায় তারা খবর পায় যে স্থানীয় গ্রামবাসী অবিনাশ মণ্ডলের চারটি ছাগল খেয়ে বাঘটি তারই ঘরের চালে বসে আছে। তখন গ্রামবাসী বাঘটিকে ঘিরে ফেলে। গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে নিচ নামায় এবং সবাই মিলে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে বাঘটিকে হত্যা করে।

সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত গাছে ঝুলিয়ে রাখা নিহত বাঘের লাশের ছবি

বাঘটির হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা যেমনই হোক না কেন ঘটনাটি সত্যিই দু:খজনক। মানুষ মারা গেছে এটা অবশ্যই মর্মান্তিক ও ব্যথাদায়ক। কিন্তু বাঘটি হল পৃথিবীবিখ্যাত বাঘ, বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। বাঘটি খাদ্যাভাবে যে লোকালয়ে চলে এসেছে একথা সবাই স্বীকার করেছেন।

গত বৎসরের 'সিডর' ঘুর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাণীরা তাদের প্রাকৃতির খাদ্যের অভাবে ভুগতে থাকে। এ কারণে তাদের বিচরণক্ষেত্র বর্ধিত হয়েছে। আজকের জনকণ্ঠ পত্রিকায় দেখলাম সুন্দরবনে লোকালয়ে বন্যশুকর চলে এসেছিল। তাদের আক্রমণে কয়েকজন কিশোর-কিশোরী আহত হয়েছে। এই ঘটনা থেকেও বোঝা যায় সুন্দরবনে এখন খাদ্যাভাব কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তবে শুধুমাত্র খাদ্যাভাব বা প্রাণীদের হিংস্রতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সাথে সাথে যেভাবে বনাঞ্চলগুলো মানুষের দখলে চলে আসছে তাতে বন্যপ্রাণীরাই বা কি করতে পারে। তাদেরও তো স্বাভাবিকভাবে ঘুরে ফিরে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়। তাদেরও তো নিজস্ব পরিমণ্ডল আছে। সে জায়গা থেকে তাকে উৎখাত করতে গেলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি তো হতেই হবে। এজন্য মূল দোষটা তো বর্তায় মানুষের ঘাড়ে। একথা কি সহজে অস্বীকার করা সম্ভব?

Wednesday, June 18, 2008

বিশ্ব মরুকরণ ও খরা দিবস

গত পরশু বিশ্ব মরুকরণ ও খরা দিবস পালিত হল। খবরটি তেমন প্রচারণা পায় নাই। অথচ ব্যাপক প্রচারিত হওয়া উচিত ছিল। আবহাওয়ামণ্ডলে কার্বনের উপস্থিতি, বিশ্বের উষ্ণতাবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয়ে গেছে, তাতে আমাদের আবহাওয়ার সামান্যতম হেরফেরকে কোনরকম উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গরমের পরিমাণ শীতপ্রধান দেশগুলোর চাইতে অনেক বেশি। এ কথা সত্য। কিন্তু নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণে দেশের সামগ্রিক তাপমাত্র সহনশীলতার মাত্রাকে কখনও ছাড়িয়ে যায় না। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে এই স্বস্থি আর ধারাবাহিক থাকছে না। ব্যাপকহারে বৃক্ষ কর্তন, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া, নদীগুলোতে জলের অভাব, নতুন গাছ না লাগানো ইত্যাদি কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গার মরুকরণ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। বিশেষত উত্তরবঙ্গে গত কয়েক বৎসর হল যে পরিমাণ গরম পড়ছে তা পূর্ববর্তী শত বৎসরের প্রেক্ষিতে খুবই বিরল একটি ঘটনা। অথচ এখন এই গরমের প্রাবল্য কোন বিরল ঘটনা নয়। একটি নিয়মিত সাংবাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই বৎসর তেমন গরম অবশ্য পড়েনি। কিন্তু যে বৎসরে একটু বেশি গরম পড়বে সেই বৎসরগুলোতে জনজীবন যে কিরকম বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। লু হাওয়া শব্দটিই বিদেশী। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লু হাওয়ার প্রাদুর্ভাব কখনই ছিল না। কিন্তু গত ৮-১০ বৎসরে শব্দটি বাংলা ভাষায় ধীরে ধীরে অনুপ্রবিষ্ট হচ্ছে। এর পিছনে আবহাওয়ার পরিবর্তনই মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে ফি বৎসর খরা হয়। সেখানের মানুষের জীবনে এটা এক অন্যতম দুর্যোগ। আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা যদি খরা সম্পর্কে এখনই সচেতন না হয় তাহলে তাদের কপালেও যে আফ্রিকার মানুষদের মতো দুর্ভোগ আছে এ কথা বলার জন্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হবার প্রয়োজন নেই।

Thursday, June 5, 2008

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিনে দিনে পরিবেশের যে পরিবর্তন হচ্ছে তা অনেকাংশেই জনপদের জন্য সমস্যা ডেকে আনছে এবং আগামীতেও আরও বেশি করে জনপদের ক্ষতি করবে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে অসময়ে ঝড়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস তো আছেই। এছাড়া মেরু অঞ্চলে বরফ গলার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তুষারাবৃত অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় তথা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের মত সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ জলের নিচে তলিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি উৎপাদন আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ ভাগ কমে যাবে। ফলে যে খাদ্যের সংকট হবে তাতে আর একটি দুর্ভিক্ষ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। অর্থাৎ পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো প্রধানত ক্ষতি করবে মানুষের।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঠিত হয় UNEP (United Nations Environment Programme)। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণই এর মূল উদ্দেশ্য। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক বৎসরের ৫ জুন তারিখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। বিভিন্ন আলোচনা, সভা, সেমিনার ও প্রচারণার মাধ্যমে গণমানুষকে পরিবেশ দূষণ, তার কারণ, প্রভাব ও আমাদের তথা মানুষের করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হয়।
পরিবেশ দূষণের বেশিরভাগ কারণ মানুষ সৃষ্ট। জীবাশ্ম জ্বালানী, বর্জ্য পদার্থে অব্যবস্থাপনা, শক্তির অপচয় ইত্যাদি কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। শক্তির উৎস হিসেবে জ্বালানীচালিত জেনারেটর ব্যবহার না করে যদি সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করা হয়, সাধারণ ফিলামেন্ট বাল্ব না ব্যবহার করে যদি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা হয়, ব্যক্তিগত পরিবহন বাদ দিয়ে যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা সাইকেল/ রিক্সা তথা অযান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করা হয় তাহলেও পরিবেশ দূষণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংসের অন্যতম কারণ। বায়ুমণ্ডলে এই কার্বন জমে গিয়ে পুরু স্তর তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে সৃষ্ট তাপ রাত্রে আর বিকিরিত হতে পারে না। এতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। এর ফলে মেরুঅঞ্চলের বরফ গলে দিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মত সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো। এইসব দেশের সমূদ্র উপকূলের নিম্নভূমিগুলো অতিরিক্ত জলে প্লাবিত হয়ে যাবে। ফলে মানুষের বাসস্থান ও খাদ্য উৎপাদনের জমিগুলো সমুদ্রের লবণাক্ত জলের নিচে তলিয়ে যাবে।

এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হল "Kick the Habit! Towards a Low Carbon Economy " এর বাংলা করা হয়েছে - "আর নয় কার্বনের বিষ: চাই পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি"। সত্যিই তাই। আমাদের বিভিন্ন অভ্যাসগুলোকে যদি একটু পাল্টাতে পারি, যদি পরিবেশবান্ধব অভ্যাসকে আত্মস্থ করতে পারি তাহলেই সম্ভব আমাদের এই ধরিত্রী মাতাকে সুস্থ করে তোলা। না হলে ক্ষতি তো হবে আমাদের এই মানুষেরই।