গত ২২ জুন তারিখে একটি খবর প্রায় সব পত্রিকাতে প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনে আবারো একটি বাঘ হত্যা করা হয়েছে।
প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ঘরের চালে বিশ্রামরত বাঘের ছবি
একটি বয়স্ক পুরুষ বাঘ লোকালয়ে এসে পরপর তিনজন মানুষকে হত্যা করে। পরে একটি ঘরের চালায় বাঘটি আশ্রয় নিলে গ্রামবাসী তাকে সারারাত ঘিরে রাখে।
প্রথম আলো পত্রিকার খবরে প্রকাশ "সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী, ৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর আলমগীর দেওয়ান, সুন্দরবনের কদমতলা স্টেশনের বন কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক রাত থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন।" সকালে গ্রামবাসী বাঘটির গলায় দড়ির ফাঁস পড়ায় এবং পিটিয়ে হত্যা করে। তখন সরকারি কর্মকর্তারা দূরে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনা অবলোকন করেছেন। পরদিন ২৩ জুন তারিখে পত্রিকায় এই ঘটনার নানামুখী বিশ্লেষণ দেখা যায়। কেউ সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা আলোচনা করেছেন, কেউ সরকারি বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে লোকবল এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতির অভাব থাকার কারণে এই বাঘটিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। চিড়িয়াখানায় যেমন থাকে তেমন চেতনানাশক ঔষধ যদি বনবিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে থাকত তাহলে হয়ত বাঘটির প্রাণ বাচানো যেত। পুলিশ সুপার বলেছেন তারা ফাকা গুলি করেছেন তবুও বাঘটি জঙ্গলে চলে যায় নি। গ্রামবাসীদেরকে তিনি বাধা দিয়েছেন, কিন্তু তারা তা মানে নি।
সমকাল পত্রিকায় অবশ্য ঘটনার বিবরণ অন্যরকম। মূল ঘটনা ঠিক আছে। বাঘটি পরপর তিনজন মানুষকে আকস্মিক আক্রমণে হত্যা করে। কিন্তু তাকে সারারাত গ্রামবাসী কোন জায়গায় ঘিরে রাখেনি। সকালবেলায় তারা খবর পায় যে স্থানীয় গ্রামবাসী অবিনাশ মণ্ডলের চারটি ছাগল খেয়ে বাঘটি তারই ঘরের চালে বসে আছে। তখন গ্রামবাসী বাঘটিকে ঘিরে ফেলে। গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে নিচ নামায় এবং সবাই মিলে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে বাঘটিকে হত্যা করে।
বাঘটির হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা যেমনই হোক না কেন ঘটনাটি সত্যিই দু:খজনক। মানুষ মারা গেছে এটা অবশ্যই মর্মান্তিক ও ব্যথাদায়ক। কিন্তু বাঘটি হল পৃথিবীবিখ্যাত বাঘ, বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। বাঘটি খাদ্যাভাবে যে লোকালয়ে চলে এসেছে একথা সবাই স্বীকার করেছেন।
গত বৎসরের 'সিডর' ঘুর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাণীরা তাদের প্রাকৃতির খাদ্যের অভাবে ভুগতে থাকে। এ কারণে তাদের বিচরণক্ষেত্র বর্ধিত হয়েছে। আজকের জনকণ্ঠ পত্রিকায় দেখলাম সুন্দরবনে লোকালয়ে বন্যশুকর চলে এসেছিল। তাদের আক্রমণে কয়েকজন কিশোর-কিশোরী আহত হয়েছে। এই ঘটনা থেকেও বোঝা যায় সুন্দরবনে এখন খাদ্যাভাব কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তবে শুধুমাত্র খাদ্যাভাব বা প্রাণীদের হিংস্রতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সাথে সাথে যেভাবে বনাঞ্চলগুলো মানুষের দখলে চলে আসছে তাতে বন্যপ্রাণীরাই বা কি করতে পারে। তাদেরও তো স্বাভাবিকভাবে ঘুরে ফিরে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়। তাদেরও তো নিজস্ব পরিমণ্ডল আছে। সে জায়গা থেকে তাকে উৎখাত করতে গেলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি তো হতেই হবে। এজন্য মূল দোষটা তো বর্তায় মানুষের ঘাড়ে। একথা কি সহজে অস্বীকার করা সম্ভব?
No comments:
Post a Comment