আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিনে দিনে পরিবেশের যে পরিবর্তন হচ্ছে তা অনেকাংশেই জনপদের জন্য সমস্যা ডেকে আনছে এবং আগামীতেও আরও বেশি করে জনপদের ক্ষতি করবে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে অসময়ে ঝড়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস তো আছেই। এছাড়া মেরু অঞ্চলে বরফ গলার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তুষারাবৃত অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় তথা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের মত সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ জলের নিচে তলিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি উৎপাদন আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ ভাগ কমে যাবে। ফলে যে খাদ্যের সংকট হবে তাতে আর একটি দুর্ভিক্ষ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। অর্থাৎ পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো প্রধানত ক্ষতি করবে মানুষের।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঠিত হয় UNEP (United Nations Environment Programme)। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণই এর মূল উদ্দেশ্য। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক বৎসরের ৫ জুন তারিখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। বিভিন্ন আলোচনা, সভা, সেমিনার ও প্রচারণার মাধ্যমে গণমানুষকে পরিবেশ দূষণ, তার কারণ, প্রভাব ও আমাদের তথা মানুষের করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হয়।
পরিবেশ দূষণের বেশিরভাগ কারণ মানুষ সৃষ্ট। জীবাশ্ম জ্বালানী, বর্জ্য পদার্থে অব্যবস্থাপনা, শক্তির অপচয় ইত্যাদি কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। শক্তির উৎস হিসেবে জ্বালানীচালিত জেনারেটর ব্যবহার না করে যদি সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করা হয়, সাধারণ ফিলামেন্ট বাল্ব না ব্যবহার করে যদি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা হয়, ব্যক্তিগত পরিবহন বাদ দিয়ে যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা সাইকেল/ রিক্সা তথা অযান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করা হয় তাহলেও পরিবেশ দূষণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংসের অন্যতম কারণ। বায়ুমণ্ডলে এই কার্বন জমে গিয়ে পুরু স্তর তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে সৃষ্ট তাপ রাত্রে আর বিকিরিত হতে পারে না। এতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। এর ফলে মেরুঅঞ্চলের বরফ গলে দিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মত সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো। এইসব দেশের সমূদ্র উপকূলের নিম্নভূমিগুলো অতিরিক্ত জলে প্লাবিত হয়ে যাবে। ফলে মানুষের বাসস্থান ও খাদ্য উৎপাদনের জমিগুলো সমুদ্রের লবণাক্ত জলের নিচে তলিয়ে যাবে।
এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হল "Kick the Habit! Towards a Low Carbon Economy " এর বাংলা করা হয়েছে - "আর নয় কার্বনের বিষ: চাই পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি"। সত্যিই তাই। আমাদের বিভিন্ন অভ্যাসগুলোকে যদি একটু পাল্টাতে পারি, যদি পরিবেশবান্ধব অভ্যাসকে আত্মস্থ করতে পারি তাহলেই সম্ভব আমাদের এই ধরিত্রী মাতাকে সুস্থ করে তোলা। না হলে ক্ষতি তো হবে আমাদের এই মানুষেরই।
Thursday, June 5, 2008
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment