সমকাল পত্রিকা বলধা গার্ডেনের শত বৎসর উদযাপন উপলক্ষে আজকের কালের খেয়াতে প্রখ্যাত প্রকৃতিপ্রেমিক বিপ্রদাশ বড়ুয়ার একটি লেখা প্রকাশ করেছে। সেটা পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এখানে পুন:প্রকাশ করলাম।
বিপ্রদাশ বড়ূয়া
বলধা গার্ডেনের রচয়িতা বলধার জমিদার প্রকৃতিপ্রেমিক নরেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী। ১৯০৯ সালে এই স্বপ্নযাত্রা শুরু। ১৯৩৬ সালে ২৭ বছরের চেষ্টায় বলধার সাইকি অংশের রচনা সমাপ্ত হয়। পরের বছর সাইকির মুখোমুখি অংশ শঙ্খনিধির ব্যবসায়ী লালমোহন সাহা থেকে ক্রয় করে নেন। সেই অংশের নাম হয় সিবিলি। নবাব স্ট্রিটের দুই পাশে বলধা গার্ডেন অবস্থিত। সিবিলি নির্মাণ শুরু হয় ১৯৩৮ সালে। সেখানে যে বাঁধানো সুন্দর পুকুরটি আছে তার শঙ্খনিধি নাম নরেন্দ্রনারায়ণ অপরিবর্তিত রাখেন। এ বছর সিবিলির উত্তরের সীমানা দেয়ালের কাছের ৭০ বছুরে পাম (করিফা এলাটা) গাছটিতে ক্রিম-সোনা রঙের ফুল ফুটে চিত্রিত হয়ে আছে। বলধা গার্ডেনের শতবর্ষে এ যেন প্রকৃতির অনন্য উপহার। এক বছর ধরে এই ফুল থেকে বীজ হবে, পাকবে। মাত্র একবার অজস্র সন্তানের জন্ম দিয়ে তবেই মা-গাছের ছুটি। সন্তানের জন্য এই ৭০ বছর বেঁচে থাকা, অথবা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মায়ের মৃত্যুরূপ সুখ এলো, এ যেন মরার জন্যই এতদিন বেঁচে থাকা। বলধার শতবর্ষে এই পাওয়া অনেক অনেক।
বলধার সিবিলি অংশ মূলত রচিত হয়েছিল সাইকির বীজতলা বা নার্সারি হিসেবে। নরেন্দ্রনারায়ণ নিজেই এই বাগানের নকশা প্রণয়ন করেন। অমৃতলাল আচার্যকে তিনি এর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। বাগানের সব গাছের নাম, পরিবার, কোথা থেকে আনা হয়েছে, কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে, কখন রোপণ হয়েছে সবই তাঁর মুখস্থ। তাঁকে সত্যিকার অর্থে বলধার জীবন্ত কোষগ্রন্থ বলা হতো। বাগান সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্ন তাঁর জানা।
অমৃতলাল আচার্য ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী। তাঁর বাবার সাহচর্য ছিল মি. প্রাউডলকের সঙ্গে। প্রাউডলক ছিলেন ইংরেজ, তিনি রমনা এলাকার বৃক্ষ ও পুষ্পবিন্যাস রচয়িতা। আজকের রমনার শতাব্দীর বৃক্ষ ও রাস্তার ধারের বীথি তাঁরই রচনা। এ সময় ভাইসরয় ছিলেন লর্ড কার্জন। তখন বঙ্গভঙ্গ হয়ে বিভক্ত বাংলার রাজধানী হয় ঢাকা। বাঙালি জাতীয়তাবাদী অমৃতলাল আচার্য জেলে যান এবং প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও অনুসন্ধিৎসা তাঁকে নরেন্দ্রনারায়ণের কাছে নিয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে অমৃতলাল বলধার সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত হন। তাঁর যোগদানের পরপরই নরেন্দ্রনারায়ণ শঙ্খনিধি জমিদার লালমোহন সাহা থেকে সিবিলির জায়গাটি কিনে নেন। এভাবে সাইকি ও সিবিলি নামে মুখোমুখি দুই দেবীর নামে দুটি বাগান রচিত হয়।
এই বাগানের গাছ রোপণের উদ্বোধন হয় চম্পা (মিচেলিয়া চম্পক) গাছ রুয়ে। এই গাছের বীজ থেকে চারা করেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ অমৃতলাল। পরে এর আগা ভাঙা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের পরেও বেঁচে ছিল। এটি ছিল শঙ্খনিধি পুকুরের পুব দিকের অলঙ্কৃত শান বাঁধানো ঘাটের পেছনে। সামনেই রয়েছে ঐতিহাসিক সূর্যঘড়ি।
সাইকির বর্তমান প্রবেশপথ নবাব স্ট্রিটের দিকে দক্ষিণমুখী। আদিতে ছিল এর ঠিক উত্তর দিকে, তার নাম ছিল সিংহ দরজা (লায়ন গেট)। বর্তমানে দক্ষিণ দিকে ঢুকে সোজা চলে গেলে দু’ধারে দেখা যাবে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নাম উদয়পদ্মের (ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা) সারি। আদিতে এখানে ২০টি গাছ ছিল। এই বাগানে দুটি বড় গ্রিনহাউস রয়েছে। শঙ্খনিধি পুকুরে উত্তর-পুব ধারে একটি, এটি বলধার সবচেয়ে বড় গ্রিনহাউস। এখানে প্রচুর অর্কিড ও বিদেশি গাছের সমাবেশ। অনেক দুর্লভ উদ্ভিদ এখানে আছে। বিশেষভাবে তৈরি বেড, ঝুলন্ত ও মাটিতে এরা বর্ধিত হচ্ছে। হালকা আলোয় এদের পাতা ও ফুল দারুণ সুন্দর। মাথার ওপর লোহার জাল ও বাঁশের ফালিতে রোদ প্রতিহত হচ্ছে। প্রাগৈতিহাসিক এসব উদ্ভিদ দর্শকদের বিভোল করে দেয়। বার্ডস অব প্যারাডাইস যা অষ্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাম বিমানের মনোগ্রাম দর্শকদের আবার মর্তে নিয়ে আসবে।
দ্বিতীয় গ্রিনহাউসটি রয়েছে লায়ন গেটের কাছে উত্তর দেয়াল ঘেঁষে। এটি মহৃলত পামগাছের চারা করার জন্য তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন রকমের ফার্ণ রয়েছে এখানে।
আগে উত্তর-পুব দেয়ালের পাশে ছিল একটি বাওবাব গাছ (এডানসোনিয়া ডিজিটা)। এই গাছ আবিষ্কৃত হওয়ার আগে আমেরিকা সেকোয়া জায়গানটিকা ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গাছ। বাওবাব মধ্যে আফ্রিকার গাছ, এর বিশালত্ব না দেখে অনুমান করা কঠিন। ফরাসি উদ্ভিদবিদ এডানসনের নামে এর বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে এডানসোনিয়া। তিনি নিজে গণনা করে আফ্রিকায় এমন বাওবাব গাছ দেখেছেন যার বয়স ৫ হাজার বছরের ওপর। বর্তমানে রমনাপার্কে তিনটি ও ধানমণ্ডি লেকের কাছে একটি বাওবাব আছে, সিবিলির গাছটি মরে গেছে। মিসরের ফারাওদের আগে মধ্য আফ্রিকার আদি বাসিন্দারা এর গর্তে মৃতদেহ রেখে দিত, এবং এর স্বাভাবিক রসে মৃতদেহ মমি হয়ে যেত। মিসরীয়রা সম্ভবত এই গাছের রস থেকে মমি করার উপাদান সংগ্রহ করত।
উত্তরের এই ফার্ণ হাউসের সঙ্গে আছে এক সারি বাঁধানো টব-পুকুর। মাটিতে চার-পাঁচ ফুট গভীর এই বাঁধানো টব-পুকুরে শাপলা আছে। তার দক্ষিণে লোহার জাল দিয়ে ঘেরা আছে ক্যামেলিয়া (ক্যামেলিয়া জাপোনিকা), যার আকার আকৃতি চা-গাছের (ক্যামেলিয়া চাইনেনসিস) মতো। এখানে ছয়টি ভিন্নরকমের ক্যামেলিয়া গাছ আছে। এদের ফুলের রং তুষার-ধবল থেকে তীব্র লাল। চা-গাছ বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ক্যামেলিয়া চারা রুয়ে সফলতা পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত একমাত্র বলধায় ক্যামেলিয়া গাছ আছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এতে ফুল দেখা যায়। ক্যামেলিয়া প্রথমে সাইকিতে পূর্ব-দক্ষিণ কোণের দিয়ে রোপণ করা হয়েছিল। পরে সিবিলিতে লোহার জাল দিয়ে ঘেরা ঘরে স্থানান্তরিত হয়। আর তার চালের ওপর একটি আঙুর লতা দেওয়া হয়। তার বয়সও অর্ধশতাব্দী হতে পারে, লতার মোটা শরীর দেখে এই অনুমান করা যায়। গত শীতে আমি এর তুষার-ধবল ও গোলাপি-লাল দু’রকম ফুল দেখি ও ছবি তুলেছি। সমকালে সাদা ফুলের ছবিসহ লেখা ৫ এপ্রিলে ছাপা হয়েছে। ক্যামেলিয়ার সঙ্গে সামুরাই যোদ্ধাদের গভীর সম্পর্ক ও কুসংস্কারের কথা সেখানে বলা হয়েছে।
সিবিলি উদ্ভিদতত্ত্বের গবেষণার জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ বাগান। বসন্ত থেকে গ্রীষ্মে এখানে ফোটে বহুবর্ণের বিচিত্র সব ফুল, বর্ষা পর্যন্ত তার ঢেউ চলে কৌতূহল ও বিশ্রম্ভালাপ করে করে। নানা রকম ব্রাউনিয়া, অশোকেরা, উদয়পদ্ম, স্বর্ণচাঁপা, মুচকুন্দ, খয়ের, কেয়া, অরুণ (কর্ডিয়া সেবাস্তানা), সুষমা (ব্রনফেলসিয়া), বসন্ত রঞ্জিনী (ক্যাশিয়া নভোজা), মাধবী, মধুমালতী, উলটচণ্ডাল, কাঠচাঁপা, টিউলিপ বা রুদ্রপলাশ, পলাশ, শ্বেতশিমুল, সোনালু, সজনে, কাঞ্চন, নাগকেশর প্রভৃতি কত কত ফুল! বিদেশি অনেক ফুলের তালিকা দেওয়াই হলো না। আরো কত কত দেশজ ফুল! বলধার দেড় হাজার গাছপালার তালিকা কি দিয়ে শেষ করা যায়!
প্রবেশ পথের ভেতরে ডান দিকে এগিয়ে গেলে আছে ভূর্জপত্র (যার থেকে এককালে হাতে তৈরি কাগজ হতো), নাগকেশর, পান্থপাদপ, পলাশ, নাগলিঙ্গম, গর্জন ইত্যাদি মূল্যবান গাছ। তারই নিচে সবুজ চত্বরে প্রকৃতিপ্রেমিকের চিরনিদ্রাবৃত সমাধিফলক। এর দক্ষিণ দিকে আছে বিখ্যাত আঞ্জীর (ক্যালিফোর্নিয়ান ডুমুর) গাছ, দু’বছর আগেও ছিল, বড় গুঁড়ি নিয়ে কম ডালপালাসহ আট-দশ ফুট উঁচু সমীহ আদায়কারী, বাংলাদেশে আর কোথাও এই গাছ ছিল বা আছে কি-না জানা নেই। এর ফল যজ্ঞ ডুমুরের চেয়ে বড়। শীতের দেশে এই ফল হয়, অত্যন্ত সুস্বাদু, ঢাকায় আমদানি করা আঞ্জীর খেয়েছি বছর দশেক আগে। ঢাকায় সেবার বাণিজ্য মেলায় ইরানি স্টল থেকে কিনেছিলাম। কলকাতার নিউ মার্কেটে কাশ্মীরের ভালো আঞ্জীর পাওয়া যায়। খাওয়ার সময় আঞ্জীরের ভেতরের অজস্র ছোট ছোট বীজ মুখে কচ কচ করবে। খাওয়ার আগে ভেতরটা সাফ করে নিলেই ব্যস! জাপানের শুকনো পার্সিমোন ফল, আরবের উন্নত খেজুরের ভগিনীসম বা তার চেয়ে উৎকৃষ্ট আস্বাদ পাবেন। সেই গাছটি কেটে সেখানে ছোট পাকা একটি ঘর করেছে। এই অনাচার, নষ্ট পরিকল্পনা কোনো যুক্তিতে মানা যায় না।
সিবিলি সেনচুরি প্লান্টের জন্যও বিখ্যাত। আমেরিকার এই ক্যাকটাসে ফুল আসে দীর্ঘ দশ-কুড়ি বছর পর, এজন্য এদের নাম হয়েছে সেনচুরি ফ্লাওয়ার। সিবিলির শঙ্খনিধি পুকুরের পশ্চিম পাড় এদের স্বর্গ। এখানে আছে ৬০-৭০ বছুরে কেয়া ঝাড়, তাদের শুলো বা ঠেস মূল দেখে দেখে আশ মেটে না। তার পাশে পুকুরের ধাপে ধাপে বাঁধানো পাড়ে তরুণ-তরুণীদের অবাধ স্বাধীনতাও চোখে পড়ে। আর তাদের গুনগুন স্বপ্নালাপ ও অস্ফুট কাকলি গানের ঐশ্বর্য নিয়ে ফিরে তাকাই জয় হাউসের দিকে।
ছোট্ট জয় হাউস। শঙ্খনিধি পুকুরের পশ্চিম ঘাটের সুচারু সিঁড়ির উপরে এক কক্ষের ঘর। নিচে প্রায় খালি। এক কক্ষ ঘরটির সামনে উন্মুক্ত স্থানসংবলিত মনোরম চৌকো এক এম্পিথিয়েটার হল যেন। একই সঙ্গে এখান থেকে সম্পূর্ণ গভীর পুকুরের সব ধাপ ও পুরো বাগান দেখা যায়, চারদিক দেখার মানমন্দিরতুল্য সরল সৌন্দর্যের আধারবিশেষ।
পশ্চিমের দেয়ালের পাশে আছে রস্ট্রেটা কলাবতী ও বার্ড অব প্যারাডাইস (স্টেলিৎজিয়া রেজিনায়ে)। তারপর আরো দক্ষিণে গেলে বাঁয়ে আছে আর একটি গ্রিনহাউস, এখানে আদিতে তাপনিয়ন্ত্রণ করে অমূল্য চারা সংরক্ষণ, বর্ধন ও চারা তৈরির প্রচেষ্টা হয়। এখন এখানে চারা তৈরি করা হয়। তারপর ভবন কোনায় শৌচাগার ফেলে বাঁ দিকে ঘুরতেই দেয়ালের গায়ে আছে একটি কৃষ্ণবট বা মাখন কটোরি। অদ্ভুত এর পাতার গঠনশৈলী। লম্বা বোঁটার মাথায় পাতার গোড়ায় আছে দু’পাশ থেকে পাতা এসে একটি ঠোঙ্গা গঠিত হয়েছে। এতে শ্রীকৃষ্ণ বালক বয়সে ননী রেখে খেতেন বলে প্রসিদ্ধি আছে। তারপর পাতাটি লম্বা হয়ে গেছে, পাতার আগা তীরের ফলার মতো লম্বা আর পাতাটি দর্শনযোগ্য শিরাবহুল।
বাঁ দিকে আছে কাউ (গার্সিনিয়া কোয়া), পাকলে সোনার রঙ হয়ে যায়। গ্রামে খেয়েছিলাম মনে আছে? তার পাশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল বৃক্ষ চাপালিস (আর্টোকার্পাস চাপালামা)। পরিপূর্ণ বড় হলে দৈত্যাকার। এর ফল বাতাবিলেবুর সমান, একরকম কাঁঠাল, প্রচুর কোয়া থাকে, বীজ কাঁঠাল-বিচির তুল্য ও খাদ্যগুণে ভরপুর। এর কাঠ কুঁদে বড় নৌকা হয়, কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র হয়। পাশে আছে ডেউয়া। এখানে দুটি প্রাচীন ইউক্যালিপটাস ও বড় একটি মুচকুন্দ এবং তার চেয়ে ছোট একটি মুচকুন্দ। আরো কত গাছ, কত কাহিনী।
তারপর প্রবেশপথ। এখানে ভূর্জপত্র, নাগকেশর, পান্থপাদপ কত সৌন্দর্য রচনা। কত অনাদর ও অবহেলাই না সহ্য করতে হয় মানুষের হাতে রচিত বাগানকে! সাইকি রচনা শুরু হয় ১৯০৯ সালে, সমাপ্ত হয় ১৯৩৬ সালে। সাইকির পরিকল্পনা নরেন্দ্রনারায়ণ করেছেন। রূপায়ণকারী অমৃতলাল আচার্য। এর গঠনশৈলী থেকে উদ্ভিদের সমাবেশ সবকিছু লিখতে গেলে এক কাহন পাতা হয়ে যাবে। কাহন হলো প্রাচীনকালে এক টাকা, ষোলো পণ কড়ি বা দ্রব্য অর্থাৎ ১ হাজার ২৮০টা। বলধা নিয়ে এক কাহন পৃষ্ঠার বই লেখা যায়। এখন সেদিকে না গিয়ে সাইকির প্রধান প্রধান বিশেষত্ব চুম্বকে ধরা যাক।
সাইকি ঢুকেই বাঁ দিকে প্রথম পড়বে পাম গাছটি, তার গায়ে প্রেম ভরে আলিঙ্গনাবদ্ধ আছে লতাবট। দু’পাশে টব পুকুরে শাপলা ও পদ্ম, জলকেলি বন্ধ করে দিয়েছে আমাদের ঢুকতে দেখে যেনবা। তারপর বাঁয়ে ঘৃতকুমারীর ঘর। এখন আছে দু’রকম, আগে বহু রকম ছিল। ঘরের লোহার জালে আটা লতাবটের জাফরি ছিল। এক সময় তার সামনে পান রুয়ে ছিল, এখন আছে টবে। আপনিও পারেন টবে পান করে গৃহশোভা ও গৃহীর মর্যাদা বাড়িয়ে তুলতে। এমনকি মাটির বড় গামলায় কচুরিপানা রেখে দেখুন না! অথবা মহিশখাইল্যা পান, অথবা জসিম উদ্দীনের মামাবাড়ির সাঁচি পান, অথবা আপনার প্রিয় গ্রামের বরজের পান।
এরি মধ্যে আমাজন নদীর জলভূমিতে আবিষ্কার করা আমাজন লিলির টব-পুকুর ফেলে এসেছি, সামনে বিচিত্র বকুলের পাশে আর একটি আছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আমাজান আবিষ্কার করেন রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে। এ জন্য এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো ভিক্টোরিয়া রিজিয়া।
এখানে আছে তিনটি ক্যাকটাস ঘর, দুটি ফার্ণ ঘর। দক্ষিণ প্রান্তের ফার্ণ ঘরটির গঠনশৈলী দারুণ আয়তাকার ঘরের পুব প্রান্ত উঁচু, নিচে একটি ঘর, তাতে নানা যন্ত্রপাতি ও বীজ থাকে। পশ্চিম দিকটি মাঝখান থেকে ধাপে ধাপে উঠে গেছে এবং উপরে বসে বিশ্রাম সুখসেবা গ্রহণ করা যায়। তার নিচে আছে একটি পাথুরে সুড়ঙ্গ, যেন আদিম যুগের কোনো মুলুকে এসে পড়েছি। আমি যতবার এই সুড়ঙ্গ দেখেছি ও তার ভেতর দিয়ে গেছি শিহরণ অনুভব করেছি। বলধার এই অমেয় অনুভূব নিয়ে লিখেছি ‘অন্তর ও বাইরের ডাক’ গল্প, এটি সংকলিত হয়েছে ‘আমি একটি স্বপ্ন কিনেছিলাম’ গল্পগ্রন্থে।
এখানে আছে ভূতনাগিনী উদ্ভিদ। তার বীজের অদ্ভুত গন্ধ শুকিয়ে ধ্রুব এষের তিন দিনের মাথাব্যথা সারিয়ে দিয়েছি। সিন্দুরি বীজ দিয়ে এক তরুণীর হাতের সব নখ কামনা রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলাম, ওর প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কঠিন সলজ্জ বাধার জন্য পায়ের নখ রাঙিয়ে দিতে পারিনি। এর স্বর্ণঅশোক, প্যাপিরাস ঘাস, বিচিত্র বকুল- আরো কত রয়ে গেল। সিকি কাহনও বলা হল না। বলধা আমার শিক্ষক, আমার আবেগ ও উদ্বেগ। এক শ’ বছর তো কোনো মতে গেল। ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য আরেক শতাব্দী থাকবে তো?
khub bhalo laglo amon bhabna.
ReplyDeleteits one of my favourite places. christian graveyard er side e ekta dhibi achhe, chhotobelay oitate utthle mone hoto pahare chorechhi!
ReplyDelete