Monday, April 21, 2008

চিলের রাত্রিযাপন


কুড়িগ্রাম শহরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের ঠিক দক্ষিণের বিরাট ইউক্যলিপটাস গাছে চিলদের রাত্রিযাপন যে হয় তা খেয়াল করিনি। আজ বিকেলে সন্ধ্যার আগে আগে নিচ দিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ উপরে তাকিয়ে দেখি বেশ কিছু চিল সেখানে বসে আছে। কুড়িগ্রামে এই মৌসুমে অনেক চিল যে এসেছে তা জানতাম। কিন্তু কোথায় থাকে তা জানতাম না। গতকাল আর একজনের কাছে শুনলাম শিশুনিকেতনের পাশে একটি গাছে চিলের বাসা আছে। ওরা মাঝেমাঝে ঢিল ছুড়ে চিল পরিবারকে বিরক্ত করে। বাড়ির হাস-মুরগীর ছানা নিয়ে যায় আবার হঠাৎ করে ছোঁ দিয়ে মাছ নিয়ে যায়। আমি তাকে চিলের খাদ্যাভাবের কথা বোঝালাম। চিলের আবাসসঙ্কট যে প্রকট সেটা জানালাম। সে বুঝল। তাকে আরও বললাম কুড়িগ্রাম শহরকে যদি চিলের জন্য অভয়ারণ্য ধরণের কিছু তৈরি করা যেত তাহলে তা আমাদের জন্য গর্বের হত।

ইউক্যালিপটাস গাছে চিলের কোন বাসা নেই। তারা সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘরে বেড়িয়ে রাত্রে এখানে এসে থাকে। আমার ক্যামেরা ততোটা ভাল নয়। তাই ভাল ছবি উঠল না।

রাস্তার পাশে গাছ




রাস্তার পাশে এরকম গাছ থাকলে সত্যিই ভাল লাগে। মানুষের যাওয়া আসার ক্লান্তির অনেকটা উপশম হয়ে যায়। গ্রীষ্মের তাপদাহে যখন পথিক অবসন্ন হয়ে পড়ে, তখন গাছতলার ছায়া যে কি স্বস্তি দেয় তা ঘটনার শিকার ব্যক্তিমাত্রই বুঝতে পারেন। আর শুধু ছায়া কেন, ফলবান বৃক্ষ হলে কিংবা দেশী বৃক্ষ হলে পাখিরা সেখানে বাসা বাঁধতে পারে। প্রকৃতির সদস্য হয়ে জীবনের বিস্তৃতি এবং বিকাশ ঘটাতে পারে। উপরের ছবি নেয়া হয়েছে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা গ্রাম থেকে।

Friday, April 11, 2008

তোগিয়ান ধলাচোখ

প্রথম আলো পত্রিকার ৭ মার্চ সংখ্যায় একটি নতুন পাখির খবর পড়লামলিখেছেন ইনাম আল হকসাধারণত আমরা মনে করি পৃথিবীর সব পাখি মানুষ দেখে ফেলেছেআর নতুন কোন পাখি আবিষ্কারের জন্য অপেক্ষা করে নেইকিন্তু সকলের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সোলাবেশি প্রদেশের তোগিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এই পাখি আবিষ্কৃত হয়েছেতোগিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাত্র তিনটি ছোট দ্বীপে একে দেখা গেছে
সাইজ মৌটুসির মতো ছোট্ট একটুকুনরঙ সবুজএই প্রজাতির অন্যান্য পাখিরাও দেখতে প্রায় একই রকমতবে এর চোখের চারপাশে সাদা চামড়ার এটি সুক্ষ্ম বলয় আছেশৈশব কৈশোরে এই বলয় স্পষ্ট হয় নাসাবালক হলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এরা সংখ্যায় খুব অল্প, স্বভাবেও লাজুকআবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একে বিপন্ন পাখির তালিকায় ঠাঁই নিতে হয়েছেকারণ তোগিয়ান দ্বীপপুঞ্জ কোন কারণে ধ্বংস হলে এদের নিজস্ব বাসস্থান বিনষ্ট হয়ে যাবে
এর ইংরেজি নাম Togian white-eye আর বৈজ্ঞানিক নাম জোস্টেরোপস সোমাডিকার্টাই (Zosterops somadikartai)। ধারণা করা হত পৃথিবীতে মোট ৯৪ প্রজাতির ধলাচোখ পাখি ছিল। এখন এই সংখ্যাটি দাড়াল ৯৫। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, এশিয়ার ভারত সহ দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও পেরুতে একে দেখা যায়। বাংলাদেশেও এই পাখিটির একটি প্রজাতি আছে। নাম উদয়ী ধলাচোখ। পশ্চিমবঙ্গে এর নাম বাবুন, বাবুনা অথবা বাবুনাই।

এরা চড়ুইয়ের চেয়ে ছোট, হালকা হলুদে সবুজে মেশানো কচি পাতার মত গায়ের রং। চোখের চারপাশে চওড়া সাদা চশমা দেখে সহজেই শনাক্ত করা যায়। উদয়ী ধলাচোখ পাখির ইংরেজি নাম অরিয়েন্টাল হোয়াইট আই (Oriental white-eye), আর বৈজ্ঞানিক নাম জোস্টেরোপস পালপেব্রোসাস (Zosterops palpebrosus)

এই বসন্তে তারা বাসা বানায়। বিভিন্ন খড়কুটো, মাকড়সার জাল তাদের বাসা বানাবার প্রধান উপকরণ। বৈশাখের শেষে বাচ্চা ফুটে বের হবে। তখন গ্রীষ্মমন্ডলীয় বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় খেয়ে তাদের বাচ্চাদের নতুন জীবন শুরু হবে।

পৃথিবীর পাখির তালিকায় নতুন পাখি সংযোজন হওয়ার খবরটি জানার সাথে সাথে আমরাও আমাদের দেশের পাখি সম্পর্কে সচেতন হব বলে আশা রাখি।

Wednesday, April 9, 2008

লামচিতা

বাংলাদেশে একটি অসাধারণ বাঘ আছেএর নাম লামচিতাএমন বাঘ আগে উপমহাদেশের মাটিতে নিশ্চিন্তে সদলবলে ঘুরে বেড়াতকিন্তু কালপরিক্রমায় তারা মানুষের সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপের কাছে হেরে গেছেএখন ভারতে এই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছেবাংলাদেশের একমাত্র লামচিতা বাঘটি রয়েছে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের খাচায়এর ইংরেজি নাম Clouded Lepard এই বাঘটা মেয়ে বাঘএকটি পুরুষ বাঘ পাওয়া গেলে বংশবিস্তার করা যেতকিন্তু অনেক খুজেও এর কোন জোড়া পাওয়া যায়নিবাঘটির বয়স মাত্র ৪ বছরময়মনসিংহের গারো সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাত্র ৬ মাস বয়সের এই বাঘটিকে তাদের বসতি এলাকা থেকে ধরেছিলএকা একাই ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাঘটিতারা মনে করেছিল এটা বোধহয় কোন বিরল প্রজাতির বিড়াল ছানাকিন্তু আসলে এটা ছিল একটা সত্যিকারের বাঘ সেই থেকে ৪ বছর হয়ে গেছেএখন এর ওজন ২০ কেজিলম্বা সাড়ে ৪ ফুটউচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুটআফ্রিকা ও কেনিয়াতে এই প্রজাতির বাঘ পাওয়া যায় বর্তমানে এই প্রাণীটি বিশ্বে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশে এই বাঘ পাওয়ার অর্থ আমাদের এই দেশ পূর্বে এই বাঘের নিরাপদ আবাসভূমি ছিল।

পাখির কথা ও শরীফ খান

গত শুক্রবারের প্রথম আলোর অন্য আলো পড়ছিলাম পাখি বিশারদ শরীফ খান সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। তার জীবন ভাবনা, পাখি বিষয়ক আগ্রহ, কর্ম পরিধি সবকিছু সম্পর্কে সংক্ষেপে ভাল তথ্য পেলাম। তিনি আগে পাখি মারতেন। বাড়িতে বাবা-মা দুজনই পাখি শিকারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। শরীফ খান নিজেও অসংখ্য পাখি শিকার করতেন। তার সবগুলোই যে প্রয়োজনে করতেন তা নয়। বেশিরভাগ সময় আনন্দের জন্য শিকার করতেন। কিন্তু একদিনের ঘটনা তার মনে এমন প্রভাব ফেলল যে তিনি সেদিন থেকে পাখি শিকার নয় পাখি রক্ষায় মনোযোগী হয়ে উঠলেন। একদিন তিনি একটি ঘুঘু পাখিকে গুলি করলেন। যথারীতি পাখিটাকে গুলি লাগল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পড়ে না গিয়ে সেটা গাছের কোন একটি জায়গায় গিয়ে আটকে গেল। শরীফ খান পাখিটাকে পাড়তে গিয়ে দেখেন যে সেটা মা পাখি। বাসায় তার তিনটি বাচ্চা। তখনও চোখ ফোটেনি। মা পাখিটা সেখানে মরে পড়ে আছে। ছোট্ট ছানাদের শরীর রক্তে মাখামাখি। তার নিজের ভাষায়- "সাবধানে পাতার ঝোপ ফাঁক করে দেখি ছোট্ট তিনটি বাচ্চা, এখনো চোখ ফোটেনি। চোখে দেখে না, খাবারের জন্য হাঁ করতেছে তারা। মায়ের রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে শরীর, বীভৎস দৃশ্য। মৃত পাখিটাকে ওদের কাছে রেখে এলাম। ওই শেষ, শিকারজীবনের ইতি। ওই দৃশ্য আমি আজও ভুলিনি। এরপর থেকে অন্যদেরও শিকার করতে বারণ করা শুরু করি। একটা সময় পাখি ও বন্যপ্রাণীর চরম সর্বনাশ করেছি। তাই এখনো পাখিদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমা চাই বন্যপ্রাণীদের কাছে, প্রকৃতির কাছে।" সত্যিই শরীফ খানের অভিজ্ঞতা মর্মস্পর্শী। একসময় আমিও পাখি শিকারে যেতাম। সে অন্যরকমের এক নেশা। তবে বড় হবার সাথে সাথে বিভিন্ন পাখি বিষয়ক বই পড়ে আমি সচেতন হয়েছি। এখন আর পাখি শিকার করিনা। পাখি শিকার করতে অন্যদের অনুৎসাহিত করি। আসলেই আমরা পাখিদের কাছে যে অপরাধ করেছি তা ক্ষমাহীন। ইউরোপ আমেরিকায় বন্যপ্রাণীদের সাথে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের। আর আমরা এখনও তাদেরকে শত্রু কিংবা দাস ছাড়া অন্য কিছু মনে করিনা। তবে যত দিন যাচ্ছে, মানুষ ততই সচেতন হচ্ছে। সরকার বা বিভিন্ন সচেতন গোষ্ঠীদের কর্মতৎপরতা বাড়ছে। শরীফ খানের একটা কথা খুব প্রণিধানযোগ্য। "প্রত্যেক থানায় সরকারি যে খাসজমি আছে তা থেকে পাঁচ বিঘা করে যদি ফেলে রাখা হয়, তাহলে আপনাআপনি যে জীববৈচিত্র্য হবে, তা হাজার বছরেও হবে না।" বিষয়টি ভাববার ও করবার মত। শরীফ খানকে আইডিয়াটির জন্য ধন্যবাদ। প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশে পাখি বিপন্ন হবার কারণ একাধিক। এ সম্পর্কে শরীফ খান বলেন -"একটা পাখি টিকে থাকতেহলে চারটা জিনিস দরকার: নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য, বাসা বাঁধার জন্য গাছ ও বিচরণভূমি। দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর কোনো পাখিই তাকার জন্য বাসা বাঁধে না। তারা ডিম, বাচ্চ দেওয়া অর্থাৎ বংশবৃদ্ধির জন্যই বাসা করে। আমাদের দেশে জলাভুমি কমে যাচ্ছে, তাই বিপন্ন হচ্ছে বালিহাঁস। মরা তালগাছ, সুপারি গাছে বাসা বাধে টিয়া, শালিক, বসন্তবৌরি। এখন মরা গাছ সঙ্গে সঙ্গে কেটে ফেলা হয়। জলময়ুর বাসা বাধতে পারছে না। জলপিপির নেই চারণভূমি। খাদ্য সংকটে আছে ধূসর মাথা হট্টিটি। ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে পাখি।....'৭৪ থেকে যেকোনো ধরণের পাখি, বন্যপ্রাণী দরা, মারা পোষা আইনত নিষিদ্ধ। যেদেশে পাখি শিকার নিষিদ্ধ, সেই দেশে এয়ারগান ও পয়েন্ট টুটু বোর রাইফেল বিক্রি হয় কীভাবে?" ঠিক প্রশ্ন করেছেন শরীফ খান।

পাখি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় শরীফ খানের তৎপরতা অনেক। পাখি নিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য লেখা তো লিখে চলেছেন এছাড়া দুটো ডকুমেন্টারি ভিডিও চিত্র তৈরি করেছেন। নাম 'হালতি পাখির বাসা' ও 'হালতি নামা '০৭'। দুর্লভ পাখি হালতি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য তিনি ভিডিওচিত্র দুটি তৈরি করেছেন। এছাড়া গড়ে তুলেছেন 'বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাব, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সমিতি। তাদের উদ্যোগে করা হয়েছে শিশুদের সংগঠন লাভ বার্ড ক্লাব ও লাভ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাব।

শরীফ খানের উল্লেখযোগ্য বই হল বাংলাদেশের পাখি। এই বইয়ে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে পরিযায়ী পাখি রয়েছে ২০০ প্রজাতির। বিভিন্ন পাখির বর্ণনা ছাড়াও তাদের আচার আচরণের তথ্যমূলক বিবরণ রয়েছে বইটিতে।

সম্পূর্ণ ফিচারটি পড়ে ভাল লেগেছে।

Wednesday, April 2, 2008

নতুন পাতা গজাবার দিন




বসন্তকাল এসে গেছে। গাছে গাছে নবপল্লব উকি দিচ্ছে। নতুনের আবাহনী সঙ্গীত শোনা যাচ্ছে। গাছে গাছে নতুন দিনের, নতুন বছরের সাড়া পড়ে গেছে। সবাই পুরনো পাতা ঝরিয়ে নতুন পাতায় নিজের শরীর সজ্জিত করায় ব্যস্ত। তাই চারপাশে সবুজ আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। এখন যে গাছকে দেখি সেই নতুন পোষাকে, নতুন সবুজে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। বসন্তের এই রূপ সত্যিই মনোহর।

প্রকৃতির এই এক মজার খেলা। পুরনো, জীর্ণ, দীর্ণকে পরিত্যাগ করে নতুন বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নতুন ফুলের সুবাসে কিছুদিন আগে চারপাশ মৌ মৌ করতো। এখন এসেছে নতুন পাতায় শরীর ঢেকে ফেলবার সময়। গাছদের এখন আর তাই কোন অবসর নেই। তারা খুব ব্যস্ত।

কয়েকদিন আগে আমার কর্মক্ষেত্রে গাছেদের এমন কর্মব্যস্ততা বেশ চোখে পড়েছিল। আশেপাশের দরিদ্র মহিলারা সারাদিন গাছের তলায় পাতা কুড়াতে ব্যস্ত দিন কাটাতো। এখনই ঝাড় দিয়ে কিছু পাতা জড়ো করলো, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ঝরাপাতা দিয়ে গাছের তল ভর্তি হয়ে গেল। দরিদ্র মহিলারা বস্তা ভর্তি করে শুকনো পাতা জড়ো করেছে। তাদের কিছুদিনের জ্বালানীর চিন্তা মিটে গেছে।

আর এখন এসেছে নবপত্রপল্লবের দিন। এখন নতুন পাতা গজানোর দিন। নতুন সময়, নতুন বছর, নতুন গান গাইবার দিন।

আরও চিলের বাসা




কুড়িগ্রামের আরও একটি জায়গায় চিলের বাসা খুজে পাওয়া গেল। খলিলগঞ্জ বাজারের পাশে। একটি এনজিও অফিস বিল্ডিং। এই বিল্ডিং এর উপরে মোবাইল কোম্পানীর একটি মাঝারি সাইজের টাওয়ার। এই টাওয়ারের উপরের দুইটি তাকে দুই জোড়া চিল (ভুবন চিল) বাসা দিয়েছে। এমনটা ঘটা একটি বিরল ঘটনা। সাধারণত এমন হয় না। একই টাওয়ারে দুইটা চিলের বাসা দেখার সৌভাগ্য আমার হল এটা ভাবতে ভালো লাগছে।

চিল সাধারণত দুজনে মিলে সংসার পাতে। আশেপাশে কম সময়ই অন্য চিলকে সহ্য করতে পারে। তবে তাই বলে চিলেরা অসামাজিক পাখি নয়। গতকাল সন্ধ্যায় ঘোষপাড়ার যে টাওয়ারটাতে চিলের বাসা আছে সেখানে দু'জন মোবাইল কোম্পানীর কর্মী উঠেছিল। তারা কোনরকম টেকনিক্যাল কাজের জন্য উঠেছিল। চিলদুটো চিৎকারে চারপাশ কাপিয়ে দিচ্ছিল। আমি বুঝতে পারলাম চিলচিৎকার কাকে বলে। ধীরে ধীরে চারপাশ থেকে আরও চিল এসে জড়ো হল। টাওয়ারটিকে কেন্দ্রে রেখে আকাশে চিলেরা ঘুরে ঘুরে উড়তেছিল। মাঝে মাঝে দু'একটা চিল কর্মী দুজনকে ছোঁ মেরে ভয় দেখাচ্ছিল। সন্ধ্যার সময়ের ঘটনা। আমার হাতে ক্যামেরা ছিল না। থাকলেও ভাল উঠত না। চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। তখন আমি চিলগুলোকে গোনার চেষ্টা করলাম। ৩০-৩৮টার মতো হবে। এতগুলো চিল আশেপাশে ছিল আমি ভাবতেও পারিনি। তাদের পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। চিলেরাও যে অন্য চিলের সমস্যা দু:খ ভাগাভাগি করে নিতে চায় তা আমি জানতাম না।

মোবাইল কোম্পানীগুলোর দেশের পাখিসম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসার সময় হয়েছে। তারা দেশের জনগণের সাথে ব্যবসা ভালই করছে। প্রতিদিন তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হচ্ছে। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে তাদের নেটওয়ার্ক পৌছে যাচ্ছে। তারা হয়তো আরও প্রত্যন্ত গ্রামে তাদের টাওয়ার বসাবে। সেখানের খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে ব্যবসা করবে। বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলে তারা পসরা নিয়ে যাবে কিন্তু সেখানকার প্রকৃতি সংরক্ষণে সামান্যতম ভূমিকা রাখবে না তা হওয়া উচিত নয়। মোবাইল কোম্পানীগুলো প্রকৃতি সংরক্ষণে বিভিন্নরকম অবদান রাখতে পারে। তার মধ্যে তাদের প্রত্যেকটি টাওয়ারে পাখির বাসা তৈরি করাটা হতে পারে দারুণ একটি কাজ। এ উদ্যোগ নিতে পারলে তারা বাংলাদেশের জনগণের প্রশংসাই পাবে। জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সময় লাগবেনা।