বাংলাদেশে বেশ দ্রুত নেপিয়ার ঘাসের বিস্তার ঘটছে। পশুখাদ্য হিসেবে এই ঘাসের পুষ্টিমান খুবই উন্নতমানের। তাই বাংলাদেশ সরকার বিদেশ থেকে এই ঘাসের বীজ আমদানি করে দেশের পশুপালকদের মধ্যে বিতরণ করেছে। তাদেরকে বিভিন্নরকম উব্ধুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঘাসের উপকারীতা ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশের পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব পড়বে তা পরিষ্কার নয়। আপাতভাবে ধারণা করা হয় যে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এই ঘাসের তেমন কোন খারাপ প্রভাব নেই।
Tuesday, March 25, 2008
নেপিয়ার ঘাস
Saturday, March 22, 2008
বিশ্ব জল দিবস
পাশের ছবিটি নেয়া হয়েছে worldwaterday.org থেকে
আজ ২২ মার্চ বিশ্ব জল দিবস। জল একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। জীবনের সচলতার জন্য জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিরাপদ জল ছাড়া সুস্থ্য থাকাও দুরূহ।
বিশ্বে প্রত্যেক ৬ জনের মধ্যে মাত্র একজন নিরাপদ জল পান করতে পারে। নারী ও শিশুরা ২০০ মিলিয়ন ঘন্টা প্রতিদিন জলের খোঁজে ব্যায় করে। তাও তার উৎস অধিকাংশ সময় থাকে দূষিত।
দুষিত জলের প্রভাব খুবই সাংঘাতিক। প্রত্যেক ১৫ সেকেন্ডে একজন শিশু জলবাহিত রোগে মারা যায়। বিশ্বে বেশিরভাগ মৃত্যু ও রোগের কারণ দূষিত জল। মার্চের ২২ তারিখ সুপেয় জলের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবার দিন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে প্রত্যেক বছর ২২ মার্চ বিশ্ব জল দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বাংলাদেশের বিশুদ্ধ জলের অভাব খুব প্রকট। শহরাঞ্চলে তো বটেই গ্রামাঞ্চলও এর প্রভাবে বাইরে না। বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া আর্সেনিক এর সংক্রমণ দুষিত জলের মাধ্যমেই ঘটেছে। আমাদের এখনই সুপেয় জল বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
Wednesday, March 19, 2008
ঘাস ফড়িং
হঠাৎ করে একটি ঘাস ফড়িং এর দেখা পেয়ে গেলাম। বহুদিন ফড়িং দেখিনা। ছোটবেলায় যখন দেবীগঞ্জে ছিলাম, তখন চারপাশে বেশ ঝোপঝাড় ছিল। ফড়িং এর পিছনে পিছনে খুব দৌড়াতাম। মাঝে মাঝে দু একটা ধরে ফেলতাম। লেজের ডগায় সুতো বেঁধে ছেড়ে দিতাম। ফড়িং এর ওড়ার তালে তালে সুতাটাও দোল খেয়ে উড়ত। দেখে খুব মজা পেতাম।
Tuesday, March 18, 2008
মশার আগ্রাসন
ইদানীং পরিবেশ দূষণ খুব বেড়েছে। বিশেষত শহরাঞ্চলের ড্রেনেজ সিস্টেম একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। জল জমে থাকে। পচা জলে মশা সংসার পাতে। ডিম ফোটায়। বাচ্চার জন্ম নেয়। এজন্য চারপাশে মশার অত্যাচার খুব বেড়ে গেছে। ঘরের ভিতর মশার গুনগুন স্পষ্ট শোনা যায়। আকাশে মেঘের মত ঘন হয়ে উড়ে বেড়ায়। পরিবেশ দূষণ যে কতটা বেড়ে গেছে, তা মশার বংশবৃদ্ধি দেখে বোঝা যায়।
Sunday, March 16, 2008
ভুবন চিলের বাড়ি - ঘোষপাড়া
চিল
Pariah Kite
(Milvis migrans)
বাজ বংশের পাখি এই চিল। অনেকে ভুবন চিল বলেও ডেকে থাকে। শিকারী পাখি। সুউচ্চ কোন জায়গায় এরা বাসা বানাতে পছন্দ করে। যেমন নীচের ছবির মোবাইল ফোনের টাওয়ার। কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়াকে ঢাকার গুলিস্তান এলাকার সাথে তুলনা করা যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত একটি জায়গা। এরকম একটি জায়গায় চিল বাসা বানিয়েছে। নিচের শত কোলাহল উপেক্ষা করে তারা সুখে সংসার করছে। কেউ কারও দিকে তাকাবার সময় পায়না সারাদিন। আমি যখন টাওয়ারের চিলের বাসার ছবি তুলছিলাম। তখন চারপাশের মানুষেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। ওরা কেউ কেউ আবার মন্তব্য করছিল বাসাটা ভেঙে দেবার জন্য। কারণ চিলের বাসার কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের যদি কোন সমস্যা হয়? এটাই বাস্তবতা। মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা চিলের প্রয়োজনীয়তার চাইতে বেশি। আমি অবশ্য তাদেরকে বোঝাতে পেরেছিলাম যে একটি সম্পূর্ণ মোবাইল নেটওয়ার্কের চাইতে একটি চিলের মূল্য অনেক বেশি। তা যা হোক সেখানে অনেক রকম উদাহরণ সহযোগে এই কাজটা করতে পেরেছি।
এই চিলগুলোকে অনেকে ভুবন চিল বলে ডাকে। এরা লম্বায় প্রায় ৬৭ সে.মি.। লেজটা দুভাগে বিভক্ত। এরকম লেজ নিয়ে বাতাসে জোরে ছুটতে বা আকাবাকা হয়ে হঠাৎ ছোঁ মারতে খুব সুবিধা। সমস্ত শরীর কালচে। আকাশের খুঁব উচুতে উঠতে পাড়ে। সেদিন দুপুরে আকাশে চিল দম্পতির বায়বীয় সন্তরণ দেখছিলাম। হঠাৎ একটি চিল শরীর বাঁকা করে সাঁ করে নীচে নেমে এল। ছোঁ মেরে কি যেন ঠোটে করে নিয়ে গেল। ঠিক দেখা গেলনা। আমার নিকট থেকে বেশ দূরে ছিল। অনেক উঁচু থেকেও এরা সূক্ষ্মভাবে মাটির দ্রব্যাদি দেখতে পায়। আকাশের কোলে মেঘের কাছে যখন এরা চলে যায় তখন এদের দৃষ্টি বাইনোকুলারের মত শক্তিশালী হয়ে যায়।
এরা বাংলাদেশের নিজস্ব পাখি। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে ভারত ও বার্মাতে কেউ কেউ ভ্রমণ করতে যায়। আর এই শীতমৌসুমে বাচ্চা ফোটাবার জন্য বাংলাদেশের গ্রামান্তরে আশ্রয় নেয়।
এদের বাসা বানাবার উপযুক্ত গাছ এখন খুবই কম। তাই তারা এখন অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। মোবাইল কোম্পানীগুলো যদি আমাদের দেশে শুধুমাত্র ব্যবসা না করে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা খরচ করত তাহলে বেশ হত। তাদের প্রত্যেকটা টাওয়ারে পাখিদের জন্য বাসা তৈরি করে দেয়া যেতে পারে। এভাবে বেশ কিছু পাখির গৃহহীনদশা ঘুচতে পারে।

ভুবন চিলের বাড়ি - বাস টার্মিনাল
পাশের ছবিটি প্রধান বাস টার্মিনালের পাশের মোবাইল ফোনের টাওয়ারে বানানো চিলের বাসা
কুড়িগ্রাম শহরের ব্যস্ত এলাকা হল বাসটার্মিনাল। এই জায়গাসারাদিন ব্যস্ত থাকে। এই হট্টগোলের জায়গাতে বাসা দিয়েছে চিল।
বড় বড় গাছ এখন আর নাই। তাই মোবাইল ফোন কোম্পানীর টাওয়ারকেই বেছে নিয়েছে বাসা বানাবার উপযুক্ত জায়গা বলে। গ্রামের মধ্যেও এখন আর চিলের বাসা বানাবার জন্য তেমন সুউচ্চ কোন গাছ নেই। সব কেটে ফেলা হয়েছে। মানুষের বিবিধ প্রয়োজনের কাছে চিলের বাড়ি বানাবার উপযুক্ত জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে।
শহরের মধ্যে সারাদিন হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি হয়। বাস ট্রাকের হর্ণ চারপাশ কাপিয়ে তোলে। তারপরও চিলেরা সংসার পেতেছে ঠিক শহরের শরীরে। এটা অবাক হবার মতো ঘটনা। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটা হতে পারে যে শহরের খাবারের তেমন অভাব নেই। গ্রামাঞ্চলেও এখন সুউচ্চ টাওয়ার হয়ে গেছে। সেখানে বাসা বানায়নি। হয়তো সব টাওয়ারে বাসা বানাবার উপযুক্ত প্লাটফরম থাকেনা।

Friday, March 14, 2008
সুন্দরবন ২
সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রসীমানায় অবস্থিত। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। জাতিসংঘ থেকে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

- স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে ২৭.৬০%
- সরিসৃপ রয়েছে ২৪.৪৭%
- উভচর রয়েছে ৩৬.৩৫%
- পাখি রয়েছে ৩৪.৫৭%

নিজস্ব প্রজাতির পাশাপাশি ঋতুভেদে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সুন্দরবনের আকাশ কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখে। প্রায় ৫০টিরও বেশি প্রজাতির পাখির নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সুন্দরবনে।
- হরিণ রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার,
- বানর রয়েছে ৫০ হাজার,
- কুমির রয়েছে ২০০টি,
- বন্যশুকর রয়েছে ২৫ হাজার।
সুন্দরবনের কুমির।
সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুমীর চন্দ্রবোড়া, গোখরা, অজগর, রাজগোখরা, দারাস সাপ, গুইসাপ, গিরগিটি, টিকটিকি সহ সামুদ্রিক সাপ।
Thursday, March 13, 2008
সুন্দরবন ১
সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাংলাদেশের ফুসফুস বলা হয়। সম্প্রতি প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড় 'সিডর'কে বুকে পেতে নিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় সুন্দরবনের অক্লান্ত প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু মানুষ তার প্রতিদান দিচ্ছেনা। মানুষের বিভিন্ন বনধ্বংসী কর্মকাণ্ডের ফলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়। অথচ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ও সম্পদে পরিপূর্ণ এই সুন্দরবনকে আমরা আরো সমৃদ্ধশালী বানাতে পারতাম। সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু তথ্য নিম্নরূপ:
- গাছ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির
- শৈবাল রয়েছে ১৬৫ প্রজাতির
- অর্কিড রয়েছে ১৩ প্রজাতির
এ মধ্যে সুন্দরী গাছ আছে ৭৩% এবং গেওয়া গাছ আছে ১৬ %, বাকীগুলো মিলে বাকী ১১%।
সুন্দরবনের বনজ সম্পদের অন্যতম হল গোলপাতা। নাম গোলপাতা হলেও পাতাগুলো গোল নয়। লম্বা লম্বা ঠিক নারকেল পাতার মতো। সুন্দরবনে বিভিন্নরকম ফার্ণ জন্মে। আরালি, বাইল, কেওড়া, ওড়া, ধুন্দুল, খলসি, গরান, গেওয়া, তনুশা, পশুর, টাইগারফার্ণ প্রভৃতি। এই টাইগারফার্ণ লবণাক্ত এলাকায় জন্মে। এর ঝোপে বাঘ লুকিয়ে থাকে, বিশ্রাম নেয়, তাই এর নাম টাইগার ফার্ণ।
সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদের গাছ রয়েছে। এই সব ঔষধি গাছ বিক্রি করে সরকার প্রত্যেক বৎসর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে। যেমন: কাকড়, সিংড়া, আমুর ধানসি, পানিয়াল, গাব, কালিলতা, জাম, বনলিচু, কেওয়াকাটা, নোনা ঝাউ, বামন হাট্টি, মাকাল ইত্যাদি। এছাড়াও ভোল, গিলালতা, বড়সালকান, কিরপা, গরান, হারগোজা, বুম্বা, ভাতকাঠি, স্বেতপলি, হেতলি, গোলপাতা, হোগল, কেওড়া, বাটুল, গেওয়া, তুলসিপাতা, বাসোকপাতা, উলটকম্বল, লজ্জাবতী, লোটকুড়াল, তিতবেগুন, শিয়ালকাটা ইত্যাদি মূল্যবান উদ্ভিদ সুন্দরবনের অন্যতম বনজ সম্পদ।
Wednesday, March 12, 2008
শালিক
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী একটা শালিক দেখা দুর্ভাগ্য ও দুইটা শালিক দেখা সৌভাগ্যের চিহ্ন। গায়ের রং গাঢ় সোনালী। মাথা ও লেজের দিকে কালোর স্পর্শ আছে। পা হলুদ। ঠোঁট ও চোখ হলুদ রঙের রেখায় আবৃত।
শালিক খুব সাহসী পাখি। তার কাজে কেউ বাধা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে রুখে দাঁড়াবে। সাপ, বেজি, বাঘ বা বাজ/ চিলজাতীয় পাখি দেখলে চিৎকার চেঁচামেচি করে পাড়া মাত করবে।
এরা জোড়ায় জোড়ায় জীবন যাপন করে। আবার ৫/৭ টির ছোট দলে ভাগ হয়েও চলাফেরা করে।
লম্বায় প্রায় ৯ ইঞ্চি। মাথা, গলা ও বুকের উপরের রঙ চকচকে কালো। বাকি পালক গাঢ় সোনালী।
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সবখানেই শালিক দেখা যায়। এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ভারত থেকে শালিক চালান দেয়া হয়েছিল ক্ষেতের পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য।
এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস এদের প্রজননকাল। শুকনো ঘাস, খড়, কাগজ, কাঠি, কাপড়, পালক সবকিছু দিয়ে বাসা তৈরি করে। ডিম দেয় ৪-৫টি। পুরুষ নারী দুজনে মিলে বাসা বাধে, সন্তান পালন করে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে আমার মিল হয়ে যায়।
শালিক খুব উপকারী পাখি। পোকামাকড় তো খায় তা ছাড়া সাপখোপ দেখলে চিৎকার করে উঠে বাড়ির সকলকে সতর্ক করে দেয়।
Tuesday, March 11, 2008
Monday, March 10, 2008
মরা কাক
Sunday, March 9, 2008
কয়েকটি পাখি
গাছে গাছে মুকুল
Saturday, March 8, 2008
হারিয়ে যাচ্ছে জাল! বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের চাষ
'পরিবেশপত্র' পত্রিকার বর্ষ ১০ সংখ্যা ১০ সংখ্যাটি সেদিন হাতে পেয়ে গেলাম। এ সংখ্যার প্রধান প্রতিবেদন -'পরিবেশ রক্ষার্থে চাই সুশাসন'। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় 'ডাউন টু আর্থ' (সম্ভবত: www.downtoearth.org) এর তথ্যসূত্র স্বীকার করে প্রকাশিত হয়েছে 'হারিয়ে যাচ্ছে জাল! বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের চাষ' শীর্ষক একটি রচনা। বেশ কৌতুহলোদ্দীপক রচনা এটা। উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো গেলনা।
- ২০০৪ সালে মাছ চাষের মাধ্যমে বিশ্বে ৬০ মিলিয়ন টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১.৩ মিলিয়ন টন (৫৯) শতাংশ) মাছ উৎপাদিত হয়েছে চীনে। এছাড়া ২২ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়েছে এশিয়ার অবশিষ্ট দেশগুলোতে এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে।
- চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মাছের মধ্যে ৪৫.৫ মিলিয়ন টন মাছ মানুষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে, যার বাৎসরিক বাজার মূল্য প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। বর্তমানে মিঠা পানির এবং সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ ৯৫ মিলিয়ন টন। মোট আহরণের ৬০ মিলিয়ন টন মাছ শুধুমাত্র মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ১৯৫০ সাল থেকে ২০০৪ সালে বিশ্বে মাছ চাষের পরিমাণ বার্ষিক গড় ৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই বদ্ধির হার সবচেয়ে বেশী যা ২১.৩ শতাংশ।
· মাছ চাষের জন্য বিদেশী প্রজাতির মাছ অধিক ব্যবহৃত হয়। এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০০৪ সালে Nile tilapia উৎপাদিত হয় ১.২ মিলিয়ন টন যেখানে স্থানীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়েছে ২১২,০০০ টন।
· বিশ্বব্যপী মাছের চাহিদা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। মোট উৎপাদিত মাছের ৪০ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে এবং এর রপ্তানির পরিমাণ মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, খাদ্যশস্য, চিনি ও কফিকেও অতিক্রম করেছে।
· ২০০৪ সালে, উন্নত দেশগুলো ৩৩ মিলিয়ন টন মাছ আমদানি করেছে যার মূল্য ৬১ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের বেশি। ঐ বছরে মোট মাছের ৮১ শতাংশ আমদানি করা হয়েছে।
· তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ধরার পরিমাণ ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে স্থির রয়েছে, বার্ষিক ৯০-৯৩ মিলিয়ন টন।
· কিন্তু মাছের চাহিদা শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৮৫ সাল থেকে ফিসমিল (Fishmeal) এবং মাছের তেল উৎপাদিত হচ্ছে যথাক্রমে ৬ তেকে ৭ মিলিয়ন টন। এই বিপুল পরিমাণ ফিসমিল(Fishmeal) ব্যবহৃত হচ্ছে গবাদি পশুপাখির খাদ্য হিসেবে, প্রধানত পোলট্রি খাতে। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ফিসমিল এর চাহিদার শতকরা ৩৫ ভাগই পূরণ হচ্ছে চাষকৃত মাছ দ্বারা।
· অর্থনৈতিকভাবে মাছচাষ লাভজনক হলেও, এ জাতীয় পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে জলজ প্রাণরি রোগ বিস্তারের ঝুঁকি ক্রমশ:ই বাড়ছে। এরকম একটি উদাহরণ হচ্ছে কই হারপীজ ভাইরাস (Koi Herpes Virus)। এই রোগটি ২০০২ সালে প্রথম ইন্দোনেশিয়ায় দেখা দেয় এবং সেখান থেকে পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
· মাছচাষের ফলে যে বর্জ্য তৈরি হয় তা পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। নিবিড় মাছচাষে বিপুল পরিমাণ জৈব বর্জ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদিত হয়, তাই এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে জলাশয়গুলো দুষিত হয়ে পড়বে।
· জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনুযায়ী বর্তমান ভোগের মাত্রা ঠিক রাখতে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে বাৎসরিক আরও ৪০ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত মৎস্যজাত খাদ্যের। তাই সমাধান শুধু একটিই তা হল মাছের চাষ।
· উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনকারীদের প্রধান বাধাই হচ্ছে মূলধনের স্বল্পতা। একই সঙ্গে রয়েছে জমি ও মিঠাপানির অভাব এবং জ্বালানি শক্তির মূল্য বৃদ্ধির সমস্যা। এছাড়াও উৎপাদিত পণ্য নিরাপদ কিনা সে বিষয়টির প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
Friday, March 7, 2008
প্রথম জাতীয় হাওড় সম্মেলন
আজ জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটা খবর পড়লাম। হাওড়কে বাঁচাবার জন্য জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। এটা 'প্রথম জাতীয় হাওড় সম্মেলন'। হাওড়ের প্রকৃতি, পরিবেশ ও হাওড়বাসীর জীবনজীবিকা রক্ষায় জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে দু'দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয়। উদ্বোধন করেন সাবেক বিচারপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান। খবরটি স্বস্তির। কারণ বিষয়টির সঙ্গে ২ কোটি লোকের জীবিকা জড়িত। হাওড়ের সঙ্গে আমাদের সমাজ, লোকজ জীবন, সংস্কৃতির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমিক ও বিশেষজ্ঞ বিচারপতি হাবিবুর রহমান কথাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, হাওড় অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রচলিত নীতিমালা। এ অঞ্চলের মৎস্যসম্পদের ওপর দরিদ্র মৎস্যজীবীদের কোন অধিকার নেই। হাওড় অঞ্চলের ইজারা প্রথা দরিদ্র মৎস্যজীবীদের অধিকার তেকে বঞ্চিত করেছে। তারা একদিকে পুরনো আইনের কাছে যেমন বন্দী অন্যদিকে সমাজের প্রভাবশালীদের হাতেও জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, জীববৈচিত্রসহ হাওড়ে রয়েছে বিশাল সম্পদের ভাণ্ডার। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন হলে হাওড় থেকে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মৎস্য আহরণ সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলন হাওড়ের জীবনজীবিকা, প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা ও হাওড়ের সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আইনের অসঙ্গতি চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।
আব্দুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, হাওড়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে জাতীয় সম্পদের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
সম্মেলনের প্রতম দিনে মোট চারটি অধিবেশন হয়। হাওড়ের নীতি পর্যালোচনা, হাওড়ের বন্যা ব্যবস্থাপনা, হাওড়ের জীবনজীবিকা, হাওড়ের কৃষি, হাওড়ের শিক্ষার গুণগতমান ও হাওড়ের নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এই খবরটি আমার কাছে বেশ আশাপ্রদ মনে হল। হাওড়কে নিয়ে যে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে এটা খুবই আনন্দের। বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল বিভিন্ন সম্পদে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক উর্বরতা ছাড়াও পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম বিশ্রামস্থল হল এই হাওড়গুলো। সিলেটের হাকালুকি হাওড় এর মধ্যে অন্যতম।
Saturday, March 1, 2008
সাদা সরাল
সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় একটি সাদা সরাল দেখা গেছে। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে খুব হৈচৈ পড়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে যায় এমন একটি ধবধবে সাদা সরাল দেখে। কেউ কেউ ভাবছিলেন এটা বোধহয় পাখিদের কোন নতুন প্রজাতি। কিন্তু বিশিষ্ট পাখিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক পাখিটির দৈহিক গঠন, শারীরিক বর্ণনা ও ভিডিওচিত্র দেখে এটাকে অ্যালবিনো বা শ্বেত সরাল বলে চিহ্নিত করেন। মানুষের মধ্যেও অ্যালবিনো দেখা যায়। পাখি বা প্রাণীজগতের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও এরকমটা দুর্লভ নয়। কোন কারণে মিউটেশন ঘটলে এমনটা হতে পারে। পাখির মধ্যে প্রতি ২০ লাখের মধ্যে একটির গায়ের রং এমন হতে পারে। উপরের ছবির সেই সাদা পাখিটি একটি অ্যালবিনো সরাল।
আমাদের নিজস্ব দেশীয় জলচর পাখি সরাল। এরা এক রকমের হাঁসজাতীয় পাখি। এর ইংরেজি নাম Lesser Whistling Duck। বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocygna Javanica।
এই পাখিটি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জলজ উদ্ভিদে ভরা জলাশয়ে ঘুরে বেড়ায়। শীতকালে এরা খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। খাবারের সন্ধানে এরা সন্ধ্যায় বেড়িয়ে পড়ে এবং ভোরের আগেই নিজডেরায় ফিরে আসে। জলজ উদ্ভিদ, বিভিন্ন ফল, শামুক, ছোট মাছ, ব্যাঙাচি ইত্যাদি এদের প্রিয় খাবার। বর্ষায় এদেরকে ধানক্ষেতের মাঝেও দেখা যায়। উড়ে যাওয়ার সময় এটা শিস দিয়ে ডাকে। ডাক শুনেও বোঝা যায় যে সরাল উড়ে যাচ্ছে।
এর গায়ের রঙ বাদামী। লেজের উপরের রঙ লালচে, মাথার উপরে গাঢ় বাদামী রঙের দাগ আছে। পা ও ঠোঁট কালো রঙের। বর্ষাকাল সরালের বাসা বাঁধার সময়। জলজ গাছপালা জড়ো করে জলাশয়ের তীরের কোন ঝোপে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৭ থেকে ১২টি। ডিমের রং সাদা, কিন্তু পরে বাদামী রঙে পরিবর্তিত হয়।
পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সাদা রঙের সরাল দেখা পাওয়ার কোন তথ্য নেই। আর বাংলাদেশে এটাকে দ্বিতীয়বার দেখা গেল। ১৯৯৫ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানার হ্রদে শ্বেত সরালকে দেখা গিয়েছিল।