Sunday, March 16, 2008

ভুবন চিলের বাড়ি - ঘোষপাড়া

চিল

Pariah Kite

(Milvis migrans)

বাজ বংশের পাখি এই চিল। অনেকে ভুবন চিল বলেও ডেকে থাকে। শিকারী পাখি। সুউচ্চ কোন জায়গায় এরা বাসা বানাতে পছন্দ করে। যেমন নীচের ছবির মোবাইল ফোনের টাওয়ার। কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়াকে ঢাকা গুলিস্তান এলাকার সাথে তুলনা করা যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত একটি জায়গা। এরকম একটি জায়গায় চিল বাসা বানিয়েছে। নিচের শত কোলাহল উপেক্ষা করে তারা সুখে সংসার করছে। কেউ কারও দিকে তাকাবার সময় পায়না সারাদিন। আমি যখন টাওয়ারের চিলের বাসার ছবি তুলছিলাম। তখন চারপাশের মানুষেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। ওরা কেউ কেউ আবার মন্তব্য করছিল বাসাটা ভেঙে দেবার জন্য। কারণ চিলের বাসার কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের যদি কোন সমস্যা হয়? এটাই বাস্তবতা। মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা চিলের প্রয়োজনীয়তার চাইতে বেশি। আমি অবশ্য তাদেরকে বোঝাতে পেরেছিলাম যে একটি সম্পূর্ণ মোবাইল নেটওয়ার্কের চাইতে একটি চিলের মূল্য অনেক বেশি। তা যা হোক সেখানে অনেক রকম উদাহরণ সহযোগে এই কাজটা করতে পেরেছি।

এই চিলগুলোকে অনেকে ভুবন চিল বলে ডাকে। এরা লম্বায় প্রায় ৬৭ সে.মি.। লেজটা দুভাগে বিভক্ত। এরকম লেজ নিয়ে বাতাসে জোরে ছুটতে বা আকাবাকা হয়ে হঠাৎ ছোঁ মারতে খুব সুবিধা। সমস্ত শরীর কালচে। আকাশের খুঁব উচুতে উঠতে পাড়ে। সেদিন দুপুরে আকাশে চিল দম্পতির বায়বীয় সন্তরণ দেখছিলাম। হঠাৎ একটি চিল শরীর বাঁকা করে সাঁ করে নীচে নেমে এল। ছোঁ মেরে কি যেন ঠোটে করে নিয়ে গেল। ঠিক দেখা গেলনা। আমার নিকট থেকে বেশ দূরে ছিল। অনেক উঁচু থেকেও এরা সূক্ষ্মভাবে মাটির দ্রব্যাদি দেখতে পায়। আকাশের কোলে মেঘের কাছে যখন এরা চলে যায় তখন এদের দৃষ্টি বাইনোকুলারের মত শক্তিশালী হয়ে যায়।

এরা বাংলাদেশের নিজস্ব পাখি। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে ভারত ও বার্মাতে কেউ কেউ ভ্রমণ করতে যায়। আর এই শীতমৌসুমে বাচ্চা ফোটাবার জন্য বাংলাদেশের গ্রামান্তরে আশ্রয় নেয়।

এদের বাসা বানাবার উপযুক্ত গাছ এখন খুবই কম। তাই তারা এখন অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। মোবাইল কোম্পানীগুলো যদি আমাদের দেশে শুধুমাত্র ব্যবসা না করে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা খরচ করত তাহলে বেশ হত। তাদের প্রত্যেকটা টাওয়ারে পাখিদের জন্য বাসা তৈরি করে দেয়া যেতে পারে। এভাবে বেশ কিছু পাখির গৃহহীনদশা ঘুচতে পারে।





No comments:

Post a Comment