Saturday, March 8, 2008

হারিয়ে যাচ্ছে জাল! বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের চাষ

'পরিবেশপত্র' পত্রিকার বর্ষ ১০ সংখ্যা ১০ সংখ্যাটি সেদিন হাতে পেয়ে গেলাম। এ সংখ্যার প্রধান প্রতিবেদন -'পরিবেশ রক্ষার্থে চাই সুশাসন'। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় 'ডাউন টু আর্থ' (সম্ভবত: www.downtoearth.org) এর তথ্যসূত্র স্বীকার করে প্রকাশিত হয়েছে 'হারিয়ে যাচ্ছে জাল! বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের চাষ' শীর্ষক একটি রচনা। বেশ কৌতুহলোদ্দীপক রচনা এটা। উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো গেলনা।

  • প্রাথমিকভাবে মৎস্যচাষ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুধুমাত্র এশিয়া মহাদেশের সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সাব সাহারিয়ান আফ্রিকা ব্যতীত বিশ্বব্যাপী এই কার্যক্রম আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ এবং বৃদ্ধি লাভ করেছেইউএন এর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (UN's Food and Agriculture Organization) নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে যে পরিমাণ মাছ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার প্রায় অর্ধেক আসে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পরিবর্তে মাছ চাষের মাধ্যমে
  • ২০০৪ সালে মাছ চাষের মাধ্যমে বিশ্বে ৬০ মিলিয়ন টন মাছ উৎপাদিত হয়েছেএর মধ্যে ৪১.৩ মিলিয়ন টন (৫৯) শতাংশ) মাছ উৎপাদিত হয়েছে চীনেএছাড়া ২২ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়েছে এশিয়ার অবশিষ্ট দেশগুলোতে এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে
  • চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মাছের মধ্যে ৪৫.৫ মিলিয়ন টন মাছ মানুষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে, যার বাৎসরিক বাজার মূল্য প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলারবর্তমানে মিঠা পানির এবং সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ ৯৫ মিলিয়ন টনমোট আহরণের ৬০ মিলিয়ন টন মাছ শুধুমাত্র মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়
  • ১৯৫০ সাল থেকে ২০০৪ সালে বিশ্বে মাছ চাষের পরিমাণ বার্ষিক গড় ৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছেদক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই বদ্ধির হার সবচেয়ে বেশী যা ২১.৩ শতাংশ

· মাছ চাষের জন্য বিদেশী প্রজাতির মাছ অধিক ব্যবহৃত হয়। এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০০৪ সালে Nile tilapia উৎপাদিত হয় ১.২ মিলিয়ন টন যেখানে স্থানীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়েছে ২১২,০০০ টন।

· বিশ্বব্যপী মাছের চাহিদা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। মোট উৎপাদিত মাছের ৪০ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে এবং এর রপ্তানির পরিমাণ মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, খাদ্যশস্য, চিনি ও কফিকেও অতিক্রম করেছে।

· ২০০৪ সালে, উন্নত দেশগুলো ৩৩ মিলিয়ন টন মাছ আমদানি করেছে যার মূল্য ৬১ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের বেশি। ঐ বছরে মোট মাছের ৮১ শতাংশ আমদানি করা হয়েছে।

· তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ধরার পরিমাণ ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে স্থির রয়েছে, বার্ষিক ৯০-৯৩ মিলিয়ন টন।

· কিন্তু মাছের চাহিদা শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৮৫ সাল থেকে ফিসমিল (Fishmeal) এবং মাছের তেল উৎপাদিত হচ্ছে যথাক্রমে ৬ তেকে ৭ মিলিয়ন টন। এই বিপুল পরিমাণ ফিসমিল(Fishmeal) ব্যবহৃত হচ্ছে গবাদি পশুপাখির খাদ্য হিসেবে, প্রধানত পোলট্রি খাতে। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ফিসমিল এর চাহিদার শতকরা ৩৫ ভাগই পূরণ হচ্ছে চাষকৃত মাছ দ্বারা।

· অর্থনৈতিকভাবে মাছচাষ লাভজনক হলেও, এ জাতীয় পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে জলজ প্রাণরি রোগ বিস্তারের ঝুঁকি ক্রমশ:ই বাড়ছে। এরকম একটি উদাহরণ হচ্ছে কই হারপীজ ভাইরাস (Koi Herpes Virus)। এই রোগটি ২০০২ সালে প্রথম ইন্দোনেশিয়ায় দেখা দেয় এবং সেখান থেকে পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

· মাছচাষের ফলে যে বর্জ্য তৈরি হয় তা পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। নিবিড় মাছচাষে বিপুল পরিমাণ জৈব বর্জ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদিত হয়, তাই এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে জলাশয়গুলো দুষিত হয়ে পড়বে।

· জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনুযায়ী বর্তমান ভোগের মাত্রা ঠিক রাখতে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে বাৎসরিক আরও ৪০ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত মৎস্যজাত খাদ্যের। তাই সমাধান শুধু একটিই তা হল মাছের চাষ।

· উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনকারীদের প্রধান বাধাই হচ্ছে মূলধনের স্বল্পতা। একই সঙ্গে রয়েছে জমি ও মিঠাপানির অভাব এবং জ্বালানি শক্তির মূল্য বৃদ্ধির সমস্যা। এছাড়াও উৎপাদিত পণ্য নিরাপদ কিনা সে বিষয়টির প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment