গত ১০ ও ১১ মে তারিখে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত হল। এরই প্রেক্ষিতে (সম্ভবত) ১৩ মে বাংলাদেশ নেচার কনজারভেশন কমিটি একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। এই সভায় বেশ কিছু আশংকাজনক তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে। তারা বলেছেন ৩০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১০০ প্রজাতির মত পাখি এখন আর বাংলাদেশে আসছে না। তারা অন্য কোন দেশে চলে যাচ্ছে। এতে অবশ্য পাখিদের কোন দোষ নেই। তারা যেখানে নিরাপত্তা পাবে সেখানেই যাবে। এন সি সি আরও বলেছে দেশীয় প্রজাতির প্রায় ১০ প্রজাতির পাখি গত ২০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কি মর্মান্তিক ঘটনা!
এনসিসি'র মতে পরিযায়ী পাখির মধ্যে ডানলিন, রাডি টার্নস্টোন, টেরেক সেন্ডপাইপার, গ্রেটেল্ড কাটলার, মার্সসেন্ড পাইপার, স্পোনবিল সেন্ডপাইপার, গ্রেটার ইয়োলো লেগ, স্পটেড রেডসেঙ্ক প্রভৃতি পরিযায়ী পাখি এখন আর বাংলাদেশে আসে না।
বাংলাদেশের নিজস্ব প্রজাতির পাখির মধ্যে বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান, ভারতীয় ময়ূর, গ্রেটহর্ন বিল, গ্রেটহর্ন আউল, আলেকজান্দ্রা প্যারাকিট, কোরাল, ওয়াটার কক, বাদি হাঁস বিলুপ্ত প্রজাতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। অনেক আগে গোলাপী হাঁস নামে এক প্রজাতির হাঁস জাতীয় পাখি বাংলাদেশে ছিল। সেটাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এনসিসি-এর প্রধান সাজাহান সরদার এর মতে ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পাখিশুমারী শুরু হয়। আর বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পাখি গণনা শুরু হয় ২০০২ সালে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গত বিশ বৎসরে এদেশের নিজস্ব প্রজাতির ৫০ রকমের পাখি বিলুপ্তির পর্যায়ে গেছে। আর পরিযায়ী পাখির বৈচিত্র্য কমে গেছে। আগে আসত ৩০০ প্রজাতির, আর এখন আসে ২০০ প্রজাতির। ১০০ প্রজাতির পাখি অন্য দেশকে নিজেদের পরিযায়ন এলাকা হিসেবে পছন্দ করেছে। বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত কিছু তথ্য সরাসরি তুলে দিচ্ছি।
পাখি বিশেষজ্ঞ ড. আলী রেজা খানের মতে, ইউরেশিয়ায় ৩শ' প্রজাতির বেশি প্রজননকারী পাখির এক তৃতীয়াংশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বা আফ্রিকায় পরিযান করে। এসব পাখির এক তৃতীয়াংশ আসে বাংলাদেশে। এখানে সাইবেরিয়া থেকে কম সংখ্যক পাখি আসে, বেশিরভাগই আসে হিমালয় ও উত্তর এশিয়া থেকে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের (WTB) পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "পরিযায়ী-স্থানীয় পাখি একটি এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও খাদ্য পরিস্থিতির নিদের্শক হিসাবে কাজ করে। এদের আনাগোনা কমে যাওয়া মানে তাদের আবাস ও খাদ্য ঘাটতির লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠা। এসব পাখি যাত্রা পথে খাবার ও বিরতির জন্যে দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে। খাবারের সঙ্কট হলে অন্যত্র গমন করে।"
স্থানীয় ১০ প্রজাতির পাখি পুরোপুরি বিলুপ্তির আশঙ্কা প্রকাশ করে সাজাহান সরদার জানান, গত ২০ বছরে শ'খানেক প্রজাতির বেশি পাখি রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। দেশের জন্য এটি একটি চরম বিপদ সংকেত।
আসলে আমাদের দরিদ্রতাই আমাদের চরম শত্রু। পেটে খিদে থাকলে কোন সচেতনতাই আর কাজ করে না। মানুষ যেখানে কষ্ট পায় সেখানে পাখিদের কষ্ট না হয়ে উপায় কি আর আছে?
No comments:
Post a Comment