আজকের বিডিনিউজ ২৪ এ দেখলাম নজরুল সেনাদল ও নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদ বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে কৃষ্ণচুড়ার নাম প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের স্বপক্ষে ঠিক কি কি যুক্তি তারা বলেছে তা খবরে বিস্তারিত নেই। তারা বারবার কৃষ্ণচূড়াকে পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ বলেছে। আমি তাদের বক্তব্য ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার জানামতে কৃষ্ণচূড়া একটি বিদেশী গাছ। কতদিন আগে এদেশে এসেছে তা বলতে পারব না। তবে এই গাছ এসেছে মাদাগাস্কার থেকে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে এর সৌন্দর্যের জন্য। মৌসুমে যখন গাছভর্তি লাল ফুল ফোটে তখন তার সৌন্দর্য সত্যিই অনুপম হয়ে ওঠে। চারপাশের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গাছটি পরিবেশ বান্ধব। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই গাছে পাখিরা কম বসে। পাখিরা বাসা বানায় না। এর ফল পাখিদের খাদ্য নয়। তাহলে কিভাবে এই গাছকে পরিবেশ বান্ধব বলা যায় তা ঠিক বোধগম্য হল না। বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে যদি কোন গাছকে নির্বাচন করতে হয় তাহলে আমি মনে করি বটগাছকে এই সম্মানটা দেয়া উচিত। বটগাছ আমাদের প্রকৃতি, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতিতে যত জায়গা জুড়ে আছে তার বিপরীতে আমাদের প্রতিদান একটুও নেই। বরং আমরা পরিবারের অভিভাবকের মত বটবৃক্ষকে ইটের ভাটায় অবলীলায় বিসর্জন দিয়েছি। আমাদের লোভ বয়সী অভিভাবকের হত্যালীলায় বাধা দেয় নি। অথচ বটগাছ পথিককে ছায়া দিয়ে, পাখিকে আশ্রয় দিয়ে, বিভিন্ন প্রাণীকে কোলে বাসা বানাতে দিয়ে আমাদের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। দেশী সব পাখিরা বটের ফল খেতে দারুণ পছন্দ করে। সকলে এর ডালে, পাতার ফাঁকে বাসা বানায়। বটবৃক্ষের শরীরের খোড়লে পেঁচা, সাপ প্রভৃতির বাসা অবলীলায় স্থান পায়। এখন হয়ত বটগাছকে ততটা দেখা যায় না। তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন বিদেশী গাছ। যদি বিদেশী কোন গাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে ইউক্যালিপটাসকেই বরং তা দেয়া উচিত। এই পরিবেশ বিধ্বংসী গাছটিকে আমরা যতটা ভালবাসি, দেশের আনাচে কানাচে তথা জমির আল, আলাদা জমি, বাড়ির কোণ/ উঠান, পুকুরের পাড় ইত্যাদি জায়গায় যেভাবে স্থান দিয়েছি তাতে তাকে জাতীয় বৃক্ষ না বলেই বা উপায় কি? আমি নজরুল সেনা বা নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদকে অসম্মান করতে চাচ্ছি না। তাদের যুক্তি হয়ত আরও শাণিত হতে পারে, যা খবরে বিস্তারিত আসে নি। তবে জাতীয় বৃক্ষ বলতে কোন গাছকে ঘোষণা করার আগে তা অবশ্যই উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ এবং বিশেষ করে দ্বিজেন শর্মার মতামত নিয়েই করা উচিত। আজ প্রকৃতিপ্রেমিক দ্বিজেন শর্মার ৮০তম জন্মদিন গেল। এই সুযোগে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানাচ্ছি।
Thursday, May 29, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
প্রকৃতির মতো সুন্দর এই ব্লগে কোন যোগাযোগের ঠিকানা খুঁজে পেলাম না। পেলাম আপনাদের কোন পরিচয় বা নীতিমালা। বিষয়টি আমার জন্য বিস্ময়কর। তবুও আপনাদের অভিবাদন জানাচ্ছি এইরকম একটি চমৎকার ব্লগ বাঙলায় উপহার দেয়ার জন্য। জয় নিসর্গ।
ReplyDeleteতবে আরো খুশি হবো যদি ব্লগটিতে যোগাযোগ ও আপনাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের কিছু অবহিত করেন।
নিয়াযুল।